"ফিসফিসে ছায়া: রহস্যময় বাড়ির অন্তর্গত ভয়ঙ্কর গল্প" - তৃতীয় অধ্যায়

তৃতীয় অধ্যায় ("ফিসফিসে ছায়া: রহস্যময় বাড়ির অন্তর্গত ভয়ঙ্কর গল্প")

ডক্টর আরিয়ান রাতে সেই অভিশপ্ত বাড়িতে আটকা পড়েছিলেন। চারপাশে ছায়ামূর্তিদের উপস্থিতি আরও ঘন হয়ে উঠছিল। তারা যেন আকাশের ঘন মেঘের মতো চারদিক থেকে তাকে গ্রাস করার চেষ্টা করছিল। কিন্তু তার লক্ষ্য ছিল পরিষ্কার: সারাহকে মুক্ত করতে হবে।

মন্ত্রের রহস্য উদঘাটন

আগের রাতেই ডক্টর আরিয়ান স্থানীয় পুরনো লাইব্রেরি থেকে কিছু নথিপত্র জোগাড় করেছিলেন। সেগুলোর মধ্যে একটি পুরনো জার্নালে জোসেফ কার্টারের লেখা কিছু শব্দ ছিল:

"যে আটকা পড়ে, সে ফিরে পাবে আলো; কিন্তু আগে আত্মার সাথে চুক্তি ভাঙতে হবে।"

আরিয়ান বুঝতে পারলেন, এই চুক্তি ভাঙার জন্য শুধু সাহস নয়, দরকার আত্মিক শক্তি এবং একটি নির্দিষ্ট মন্ত্র। কিন্তু সেই মন্ত্র জার্নালে অসম্পূর্ণ ছিল। তিনি নিশ্চিত ছিলেন, বাকিটা বাড়ির বেসমেন্টে লুকিয়ে রয়েছে।

অভিশপ্ত কক্ষের চ্যালেঞ্জ

ছায়াগুলোর আক্রমণ থেকে বাঁচতে আরিয়ান একটি লোহার ক্রস এবং পবিত্র জল সঙ্গে রাখলেন। বেসমেন্টে নেমে তিনি সেই গোপন কক্ষের দেয়ালগুলো খুঁজতে লাগলেন। তার চোখ পড়ল একটি অদ্ভুত নকশার উপর। সেই নকশাটি খুঁজে বের করার পর তিনি অনুভব করলেন, দেয়ালের পেছনে একটি গোপন প্রকোষ্ঠ লুকানো।

প্রকোষ্ঠ খুলতেই তিনি দেখলেন, সেখানে একটি পুরনো চামড়ার বই রাখা। বইয়ের পৃষ্ঠাগুলোতে সেই মন্ত্রের বাকি অংশ লেখা ছিল।

"আলোতে ডেকো, ছায়াকে ভাঙো; নাম যাকে বাঁধে, তাকে মুক্তি দাও।"

চূড়ান্ত লড়াই

আরিয়ান মন্ত্রটি পড়ার জন্য প্রস্তুত হলেন। কিন্তু তখনই ছায়ামূর্তিরা আরও আগ্রাসী হয়ে উঠল। তারা ঘরের দরজা বন্ধ করে দিল, বাতাস ভারী হয়ে উঠল। তাদের কণ্ঠস্বর তীব্র হয়ে গর্জে উঠল, “তাকে মুক্তি দিতে পারবে না! সে আমাদের।”

আরিয়ান নির্ভীকভাবে মন্ত্র পড়া শুরু করলেন। সঙ্গে সঙ্গে বেসমেন্ট কাঁপতে শুরু করল। একটি উজ্জ্বল আলো কক্ষের মাঝখান থেকে বেরিয়ে এলো। ছায়ামূর্তিরা চিৎকার করতে লাগল এবং একে একে গলে যেতে শুরু করল।

আলোর মাঝখানে সারাহর প্রতিচ্ছবি স্পষ্ট হতে লাগল। সে হাত বাড়িয়ে বলল, “আরিয়ান, আমাকে ধরো!”

আরিয়ান তার হাত ধরতেই পুরো ঘর আলোয় ভরে গেল। সব ছায়া মিলিয়ে গেল। একটি প্রচণ্ড ঝাঁকুনির পর চারপাশে নীরবতা নেমে এলো।

সারাহর মুক্তি

আরিয়ান যখন চোখ খুললেন, তখন সারাহ তার পাশে দাঁড়িয়ে। সে জীবিত এবং অক্ষত। তার চোখে কৃতজ্ঞতার অশ্রু।

“তুমি আমাকে মুক্ত করলে,” সারাহ কাঁপা গলায় বলল।

আরিয়ান তাকে বাইরে নিয়ে এলেন। গ্রামের মানুষজন এই ঘটনা দেখে হতবাক। বাড়িটি আর অভিশপ্ত নয়।

শেষ কথা

সারাহর মুক্তি শুধু তার নয়, পুরো গ্রামের জন্য ছিল একটি মুক্তির প্রতীক। ডক্টর আরিয়ান সেই রহস্যময় বাড়িকে একটি নতুন অধ্যায়ের দিকে নিয়ে গেলেন। তবে তার মনে একটি প্রশ্ন রয়ে গেল—কোনো আত্মা কি পুরোপুরি মুছে যায়, নাকি তারা অন্য কোনো জায়গায় অপেক্ষা করে?

(চলবে...)


Comments