"ফিসফিসে ছায়া: রহস্যময় বাড়ির অন্তর্গত ভয়ঙ্কর গল্প"- চতুর্থ অধ্যায়

সারাহকে বাড়ি থেকে মুক্ত করার পর, সবকিছু প্রথমে স্বাভাবিক মনে হলেও, কিছু অদ্ভুত ঘটনা আবার ঘটতে শুরু করল। ডক্টর আরিয়ান এবং সারাহ ভেবেছিলেন, বাড়িটি অভিশাপমুক্ত হয়েছে, কিন্তু বাড়িটির ইতিহাস যেন অত সহজে তাদের পিছু ছাড়তে চাইছিল না।

সারাহর স্বপ্ন

মুক্তির পর থেকে সারাহ প্রতি রাতেই এক অদ্ভুত স্বপ্ন দেখছিল। সে দেখতে পেত এক ছোট মেয়ে, যার মুখটা অস্পষ্ট, সারাহকে হাত ধরে কোথাও নিয়ে যেতে চাইছে। মেয়েটি বলছিল, “আমাকে খুঁজে বের করো... আমি এখনও আটকে আছি।”

প্রথমে সারাহ ভেবেছিল, এটি তার মানসিক চাপের ফল। কিন্তু প্রতিদিন একই স্বপ্ন দেখে তার মনে হতে লাগল, এই মেয়েটি হয়তো সত্যিই সাহায্য চাইছে।

গোপন ডায়েরি

ডক্টর আরিয়ান বাড়িটির ইতিহাস নিয়ে আরও গভীর গবেষণা শুরু করলেন। পুরনো রেকর্ড ঘেঁটে তিনি জানতে পারলেন, বাড়ির আগের মালিক, জোসেফ কার্টার, এক মেয়েকে বাড়িতে লুকিয়ে রেখেছিলেন। সেই মেয়েটি তার অবৈধ সন্তান ছিল, আর স্থানীয় সমাজের ভয়ে তিনি মেয়েটিকে বেসমেন্টের একটি গোপন কক্ষে আটকে রেখেছিলেন।

একদিন সারাহ বাড়ির পুরনো আসবাবপত্র পরিষ্কার করতে গিয়ে একটি ডায়েরি খুঁজে পেল। ডায়েরিতে লেখা ছিল সেই মেয়েটির শেষ কথাগুলো:

"আমি আর এখানে থাকতে পারছি না। বাবা আমাকে ভুলে গেছেন। যদি কেউ কখনো আমাকে খুঁজে পায়, আমার আত্মাকে মুক্ত করো।"

সারাহ বুঝতে পারল, স্বপ্নে দেখা মেয়েটি সম্ভবত এই শিশুটিই।

গোপন কক্ষের সন্ধান

সারাহ এবং ডক্টর আরিয়ান ঠিক করলেন, বেসমেন্টে গিয়ে গোপন কক্ষটি খুঁজে বের করবেন। তারা বেসমেন্টে নেমে আরও একবার দেয়াল ও মেঝে খুঁজতে শুরু করলেন। হঠাৎ সারাহ একটি পুরনো কাঠের বোর্ডের নিচে খোঁচা খেয়ে গেল।

কাঠ সরিয়ে দেখা গেল, মেঝের নিচে একটি ছোট দরজা। দরজাটি খুলতেই তারা দেখতে পেল একটি ছোট কক্ষ, যেখানে একটি ছোট্ট কাঠের খাট এবং একটি পুরনো পুতুল রাখা ছিল।

কক্ষটি অন্ধকার ও ভয়ংকর হলেও, সারাহ অনুভব করল মেয়েটি যেন সেখানে উপস্থিত।

শেষ মুক্তি

ডক্টর আরিয়ান সেখানে দাঁড়িয়ে সেই মন্ত্রটি আবার পড়তে শুরু করলেন। সারাহ অনুভব করল, কক্ষটি কাঁপতে শুরু করেছে। হঠাৎ সেখানে মেয়েটির ছায়া ফুটে উঠল। তার চোখে অশ্রু, কিন্তু তার মুখে একটি প্রশান্তির হাসি।

“তোমরা আমাকে মুক্ত করেছ,” মেয়েটি বলল। “এখন আমি শান্তি পেতে পারব।”

মেয়েটির প্রতিচ্ছবি ধীরে ধীরে মিলিয়ে গেল। সেই সঙ্গে কক্ষটি এক অদ্ভুত উষ্ণ আলোতে ভরে উঠল।

নতুন সূচনা

সারাহ এবং ডক্টর আরিয়ান অনুভব করলেন, বাড়িটি এবার সত্যিই মুক্ত। ছায়ামূর্তির উপস্থিতি আর নেই, বাড়ির পরিবেশ হালকা এবং স্বাভাবিক হয়ে গেছে।

গ্রামের মানুষও বাড়িটি নিয়ে আর ভয় পায় না। বাড়িটি এবার নতুন করে সাজানো হয়েছে এবং এটি একটি ঐতিহাসিক স্থান হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে, যেখানে মানুষ এসে বাড়ির পুরনো ইতিহাস জানতে পারে।

তবে সারাহ জানত, এই বাড়িটি তাকে চিরকাল একটি শিক্ষা দিয়েছে—অতীত যতই অন্ধকারময় হোক, সাহস আর বিশ্বাসের আলোই তাকে দূর করতে পারে।

(শেষ)

Comments